এম. মতিন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তখন পাকিস্তানিদের অনেকে পরাজয়ের পর নিজেদের আত্মতুষ্টির জন্য বলেছিল, কালো-বেঁটে মানুষ, বোকা বাঙালিরা আমাদের থেকে ভাগ হয়ে গেছে ভালোই হয়েছে। কিন্তু, সেই পাকিস্তানে আজ আলোচনা হয়, দয়া করে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আমাদের দিকে তাকিয়ে পাকিস্তান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন পাকিস্তান বাংলাদেশ হতে চায়।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বাসস্ট্যান্ডস্থ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিজয় র্যালিপূর্ব পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, পাকিস্তান যে এখন বাংলাদেশ হতে চায়, এখানেই হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ রচনার এবং তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সার্থকতা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই রাঙ্গুনিয়ার অনেক মানুষ জীবন দিয়েছেন। অনেককে কর্ণফুলী নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রঘোনায় পাকিস্তানিদের ক্যাম্প থেকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্যাতন চালানো হতো। পদুয়া ইউনিয়নে একদিনে ১২’শ বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ রকম রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘর জ্বালানো হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ নির্বাচনমুখী। মানুষের মাঝে যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, এটি নির্বাচন বর্জনকারী ও প্রতিহতকারীদের মুখে চপেটাঘাত। আগামী ৭ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে নির্বাচন বর্জনকারীদের মুখে কালিমা লেপন করবে এ দেশের জনগণ।
বিজয় র্যালিতে অংশ নেওয়া মানুষের উদ্দেশে নিজের নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ও বোয়ালখালী অংশের উন্নয়নের নানা চিত্র তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশ আজকে বদলে গেছে। এই রাঙ্গুনিয়ার চিত্র আপনারা একটু মনে করে দেখুন, ১৫ বছর আগে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার শেষপ্রান্ত থেকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার শেষপ্রান্তে যেতে সকালে শুরু করলে বিকেলবেলা গড়িয়ে যেত। সঙ্গে 'ভাতের মোচা' নিয়ে যেতে হতো।
সড়কগুলোর এমন করুণ অবস্থা ছিল মানুষের কোমর ব্যথা হয়ে যেত। আর বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ারে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টায় পৌঁছা যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে গ্রামের ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, বরং গ্রামের ছেলেগুলো আরও বেশি স্মার্ট। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে টেলিভিশন-ফ্রিজ ও ইন্টারনেটের লাইন, এগুলো আগে ছিল না। এগুলো সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে।
ড. হাছান বলেন, একজন কাজের লোক ডিউটি করে আট ঘণ্টা আর আমি সময় দিই ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা। সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে রাত দুইটার আগ পর্যন্ত কোনো ঘুম নেই। একজন রাখাল যেভাবে খাটে, আপনাদের সন্তান হিসেবে আমি সেই পরিমাণ খাটাখাটি করি। শুধু আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ জানাবো এই রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী অংশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, এগুলো আপনারা মাথায় রাখবেন। ৭ তারিখ মা-বোন, বউ বাচ্চা ও নাতিদের নিয়ে ভোট সেন্টারে যাবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যারা ভোট বর্জন করতে চেয়েছিল আমরা তাদের মুখে কালিমা লেপন করে দেবো ইনশাল্লাহ।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যনার, ফেস্টুন সজ্জিত গাড়ী বহর নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিজয় র্যালিতে যোগ দেন। দুপুর ১টায় বিজয় র্যালির গাড়ী বহর নিয়ে বের হন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
র্যালিটি চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রদক্ষিণ শেষে তাপবিদ্যুৎ গেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় তথ্যমন্ত্রীর বহর সঙ্গী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, উত্তরজেলা আলীগ নেতা আবুল কাশেম চিশতি, মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, মো. আলী শাহ, মো. ইদ্রিছ আজগর,কামরুল ইসলাম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইফতেখার হোসেন বাবুল, আকতার হোসেন খান, শফিকুল ইসলাম, আবদুল মোনাফ সিকদার, ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, এমরুল করিম রাশেদ, জসিম উদ্দিন তালুকদার, শামসুদ্দোহা সিকদার আরজু,বিকে লিটন চৌধুরী, মোহাম্মদ ইউনুচ, রাসেল রাসু ও আলীশাহসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও তরুণ-তরুণী বিজয় র্যালিতে অংশ গ্রহণ করেন।